Google Adsense

রেকর্ড দামে রিয়াল মাদ্রিদে আর্জেন্টাইন বিস্ময় বালক

রেকর্ড দামে রিয়াল মাদ্রিদে আর্জেন্টাইন বিস্ময় বালক

সাধারণত দলবদলে বাজারে খুব বেশি অর্থ খরচ করে না স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ। এজন্য ক্লাবটির প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে বলা হয়, দলবদলের বাজারের সবচেয়ে অভিজ্ঞ শিকারি। তবে দলবদলের বাজারে রিয়াল মাদ্রিদ যার উপর নজর রাখেন, অন্য কারো তাকে দলে ভেড়ানোর সাধ্য নেই।

এই যেমন আর্জেন্টিনার ১৭ বছর বয়সী বিস্ময় বালক ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনোর কথাই ধরা যাক। নিজের প্রতিভার ঝলক দিয়ে এই বয়সেই নজর কেড়েছিলেন ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলোর। তাকে দলে ভেড়াতে মাঠেও নেমেছিল দলগুলো। কিন্তু সবাইকে পেছনে ফেলে রেকর্ড দামে আর্জেন্টিনাইন এই বিস্ময় বালককে দলে ভিড়িয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।

আজ শুক্রবার (১৩ জুন) নিজেদের ওয়েবসাইটে মাস্তানতুয়োনোকে দলে ভেড়ানোর কথা জানিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ছয় বছরের চুক্তি এই আর্জেন্টাইনের সঙ্গে। তরুণ এই ফুটবলার রিয়ালে নাম লেখানোয় দীর্ঘ সময় পরে আবারো কোনো আর্জেন্টাইন এলো লস ব্লাঙ্কোসদের ঘরে। এর আগে সর্বশেষ ২০১০ সালে আনহেল ডি মারিয়া কোনো আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় হিসেবে রিয়ালে খেলেছেন। এরপর প্রায় ১৬ বছর রিয়ালে দেখা যায়নি কোনো আর্জেন্টাইনকে।

মাস্তানতুয়োনোর সঙ্গে চুক্তির অঙ্ক

রিয়াল মাদ্রিদ মাস্তানতুয়োনোর চুক্তির অঙ্ক না জানালেও রিভার প্লেট সেটি সামনে এনেছে। দলটির বিবৃতি অনুযায়ী, তরুণ এই তারকাকে দলে ভেড়াতে রিয়ালকে গুনতে হয়েছে ৬ কোটি ৩২ লাখ ইউরো। বাংলাদেশি টাকায় যেটা দাঁড়ায় ৮৯২ কোটি ৮২ লাখ ৬২ হাজার ৪০০ টাকা।

তবে টাকা পাবেন না মাস্তানতুয়োনো। এর মধ্যে রিলিজ ক্লজ হিসেবে ৪ কোটি ৫০ লাখ ইউরো (৬৩৫ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) পাবে রিভার প্লেট। বাকি টাকা বিভিন্ন ধরনের কর, ফুটবলার অ্যাসোসিয়েশন, এএফএ ফান্ড এবং অন্যান্য ফি হিসেবে খরচ হচ্ছে।

জানা গেছে, ২০৩১ সাল পর্যন্ত ছয় বছরের চুক্তিতে তাকে দলে ভিড়িয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। স্পষ্ট করে কোনো পক্ষ না জানালেও শোনা যাচ্ছে, প্রতি বছর প্রায় ৩৫ লাখ ইউরো নেট বেতন মাস্তানতুয়োনোর। আর্জেন্টিনার এই ভবিষ্যৎ তারকার রিলিজ ক্লজ রেখেছে রিয়াল মাদ্রিদ ১০০ কোটি ইউরো। যা বাংলোদেশি টাকায় ১৪ হাজার ১২৭ কোটি টাকা।

বড় অঙ্কের চুক্তিতে নতুন রেকর্ড

বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, আর্জেন্টিনার কোনো ক্লাব থেকে দলবদল করা ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় এখন ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনো। এর আগে এতো বেশি মূল্যের চুক্তি হয়নি অন্য কারো সঙ্গে। এর আগের সর্বোচ্চ চুক্তি ছিল ৪ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার ইউরো। যা মাস্তানতুয়োনোর চেয়ে ১ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার ইউরো কম।

২০২২-২৩ মৌসুমে এই রিভার প্লেট থেকেই আরেক তারকা এনজো ফার্নান্দেজকে ৪ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার ইউরো ট্রান্সফার ফি-তে দলে ভিড়িয়েছিল পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকা। এটিই ছিল আগের সর্বোচ্চ ট্রান্সফার ফি।

রিয়ালের জার্সিতে কবে মাঠে নামবেন তিনি?

স্পেনের নিয়ম অনুযায়ী নিজ দেশের বাইরের কোনো ফুটবলার বয়স ১৮ বছর নাহলে তাকে খেলাতে পারবে না কোনো ক্লাব। সেটা হবে শিশুশ্রম। সেই নিয়মের কারণে রিয়াল ভক্তদের অপেক্ষা করতে হবে এই আর্জেন্টাইন বিস্ময় বালকের জন্য। তবে সেই অপেক্ষা খুব বেশি লম্বা হবে না। কারণ আগামী আগষ্ট মাসেই ১৮ বছর বয়স হতে যাচ্ছে ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনোর। এরপরই রিয়ালের জার্সিতে দেখা যাবে তাকে।

এর আগে ক্লাব বিশ্বকাপে বর্তমান ক্লাব রিভার প্লেটোর জার্সিতেই খেলবেন তিনি। আর্জেন্টাইন ক্লাবটির হয়ে খেললেও রিয়াল ভক্তদের নজর থাকবে তার দিকেই। বড় মঞ্চে কেমন করেন তিনি সেটাই দেখতে চাইবে তারা।

কে এই মাস্তানতুয়োনো

২০০৭ সালের ১৪ এপ্রিল বুয়েনস এইরেসের আজুল শহরে জন্ম মাস্তানতুয়োনোর। ছোটবেলা থেকেই সঙ্গে সঙ্গে টেনিসের প্রতিও ভালোবাসা ছিল তার। তবে ম্যারাডোনা-মেসিদের কথা ভেবেই হয়তো দেশের জনপ্রিয় খেলা ফুটবলকে বেছে নিয়েছিলেন এই তরুণ তুর্কী।

মাস্তানতুয়োনোর আনুষ্ঠানিক ফুটবল যাত্রা শুরু ২০১১ সালে রিভার দি আজুলের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন তিনি। এপর যোগ দেন ক্লাব সিমেন্টোতে। কিন্তু সেখানে স্থায়ী হতে পারেননি মাস্তানতুয়োনো। এক বছর পরই চলে যান আর্জেন্টিনার সবচেয় বড় ক্লাব রিভার প্লেটোতে।

আরো পড়ুন- মেসিকে ছাড়িয়ে গেলেন রাফিনিয়া

২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রিভার প্লেটোর বয়সভিত্তিক দলে খেলেন এই বিস্ময় বালক। গত বছর ২০২৪ সালে ক্লাবের মূল দলে অভিষেক হয় তাঁর। অভিষেকের পরই রেকর্ড বইয়ে নাম নাম লিখিয়েছেন মাস্তানতুয়োনো। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রিভার প্লেটের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী গোলদাতা হিসেবে রেকর্ড গড়ে সবার নজরে আসেন তিনি। দলটির হয়ে জেতেন আর্জেন্টাইন সুপার কাপ।

রেকর্ড দামে রিয়াল মাদ্রিদে আর্জেন্টিাইন বিস্ময় বালক
আর্জেন্টিনার ক্লাব রিভার প্লেটের জার্সিতে ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনো। ছবি: সংগৃহীত

এরই মধ্যে আলবিসেলেস্তদের আকাশী-নীল জার্সিও গায়ে জড়ানো হয়ে গেছে মাস্তানতুয়োনোর। চলতি মাসে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দুই ম্যাচের জন্য দলে ডেকেছিলেন তাকে। প্রথম ম্যাচে গত ৬ জুন চিলির বিপক্ষে মাত্র ১৭ বছর ৯ মাস ২২ দিন বয়সে জাতীয় দলে অভিষেক হয় তার। আর্জেন্টিনার হয়ে অফিশিয়াল ম্যাচ খেলা সর্ব কনিষ্ঠ খেলোয়াড়ও এখন তিনিই!

কেমন খেলেন মাস্তানতুয়োনো

মূলত মধ্যমাঠের (মিডফিল্ডার) একজন খেলোয়াড় মাস্তানতুয়োনো। গত ৬ জুন চিলির বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে খুব বেশি সময় খেলার সুযোগ পাননি তিনি। ম্যাচের শেষদিকে ৮৪তম মিনিটে থিয়াগো আলমাদার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মাস্তানতুয়োনো। এরপর প্রায় ১০ মিনিটের মতো খেলার সুযোগ পান তিনি।

এই সময়ের মধ্যেই মাস্তানতুয়োনো ৮বার বল স্পর্শ করেছেন। ৩টি পাস দিয়েছেন, যার সবগুলোই ছিল সফল পাস। মাত্র অভিষেক হওয়াই সারা বিশ্বে থাকা আর্জেন্টিনার কোটি কোটি ভক্তদের চোঁখে তাই এখনো অচেনা এই বিস্ময় বালক।

তবে অনেকেই তাকে ভাবা শুরু করেছেন ‘পরবর্তী মেসি’। আবার কারও কারও চোখে তাঁর খেলার সঙ্গে কলম্বিয়ার হামেস রদ্রিগেজের মিল আছে। কখনো কখনো উইংয়ে খেললেও খুব বেশি গতি নেই তার। ফলে বর্তমান ফুটবল বিশ্বের সঙ্গে সেখানে মানিয়ে নেওয়া কঠিন হবে তার জন্য।

তবে ‘নাম্বার ১০’ পজিশনের জন্য পারফেক্ট একজন খেলোয়াড় মাস্তানতুয়োনো। মাঝ মাঠ থেকে খেলা গড়ে তুলতে বেশ পটু তিনি। বলের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ, ছোট জায়গায় ঘুরে যাওয়া আর দূর থেকে শুটিং দক্ষতা তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে দেয়।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরে রিভার প্লেটের জার্সিতে ১০ ম্যাচে মাঠে নেমে গোল করেছেন ৩টি। সমান ৩টি গোলে অ্যাসিস্টও করেছেন তিনি। এই ১০ ম্যাচে খেলেছেন মোট ৭৫০ মিনিট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button