বাংলাদেশের স্বপ্নের শুরু আর বিষাদের শেষ

বাংলাদেশ দিনের শুরুটা করেছিল স্বপ্নের মতো। দিনের প্রথম বলেই মুজারাবানিকে ফিরিয়ে শুরু করেন তাইজুল ইসলাম। অসুস্থ ব্যাটিংয়ের নিরাময় হিসেবে এনামুল হক বিজয়কে দায়িত্ব দিয়েছিল বিসিবি। সেটা এন্টিবায়োটিকের মতোই কাজ করেছে। লম্বা সময় ধরেই ধুকতে থাকা টপঅর্ডার ব্যাটাররা উপহার দিলো স্বস্তির ব্যাটিং। আড়াই বছর পরে শতরানের উদ্বোধনী জুটি উপহার দেন বিজয় আর সাদমান। এই দুজনের ব্যাটিংয়ে দিনের শুরুটা যতটা স্বপ্নের মতো হয়েছে শেষটা হয়েছে ঠিক ততটাই বিষাদে মাখা। শেষ বিকেলে ২০ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। এতে লিড নিলেও স্বস্তিতে নেই টাইগাররা।

দ্বিতীয় দিন শেষে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৯৭ রান তুলেছে বাংলাদেশ। এতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে লিড দাঁড়িয়েছে ৬৪ রানের। অপরাজিত আছেন দুই ব্যাটার মেহেদী হাসান মিরাজ (৩৭ বলে ১৬) আর তাইজুল ইসলাম (১১ বলে ৫)। তৃতীয় দিনে লিডটা আরো বড় করাই লক্ষ্য থাকবে তাদের। বিশেষ করে মিরাজের উপর।

বাংলাদেশের এই বড় স্কোরের নায়ক অবশ্য ওপেনার সাদমান ইসলাম। দীর্ঘ চার বছর পরে টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তিনি। ২০২১ সালে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন সাদমান। প্রায় চার বছর পরে একই দলের বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ১২০ রান করলেন তিনি। সাদমানের ১৮১ বলের ইনিংসটি সাঁজানো ছিল ১৬ চার ও ১টি ছক্কায়। ২২ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এক ইনিংসে এটিই সর্বোচ্চ বাউন্ডারির রেকর্ড।

৯ উইকেট হারিয়ে ২২৭ রান নিয়ে দিন শুরু করা জিম্বাবুয়ে এদিন আর কোনো রান যোগ করতে পারেনি স্কোরবোর্ড। দিনের প্রথম বলেই তাদের লেজ কেটে দেন তাইজুল ইসলাম। ব্লেসিং মুজারাবানিকে ফিরিয়ে ৬ উইকেট তুলে নেন তিনি।

এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের শুরুটাও ভালেই করেছিলেন দুই ওপেনার। বিজয় আর সাদমান মিলে গড়েছিলেন ১১৮ রানের উদ্বোধনী জুটি। ২০২২ সালের পর এই প্রথম উদ্বোধনী জুটিতে ১০০ পেরোয় বাংলাদেশ। প্রায় তিন বছর পর টেস্ট দলে ফিরে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দিলেও ব্যক্তিগত পঞ্চাশের আগেই ফিরেছেন বিজয়। তিনি ফিরলেই ভাঙে সেই জুটি।

শুরু থেকেই বাংলাদেশের দুই ওপেনারকে খুব একটা ভুগতে হয়নি জিম্বাবুয়ের বোলিং আক্রমণের সামনে। সাদমান ইসলাম ফিফটি পেয়েছিলেন লাঞ্চের আগেই। শুরু থেকেই ছিলেন সাবলীল। নিয়মিত বিরতিতে আসছিল বাউন্ডারি। শেষ পর্যন্ত ১৪২ বলে পেয়েছেন সেঞ্চুরির দেখা। যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। প্রথম সেঞ্চুরিটাও ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। সেটা ২০২১ সালের জুলাইয়ে হারারেতে।

সাদমানের সঙ্গে মুমিনুলের জুটিটাও জমে যাচ্ছিল। দুজনে মিলে গড়েছিলেন ৭৬ রানের জুটি। তবে পরপর দুই ওভারে এই দুই ব্যাটারকে হারায় বাংলাদেশ। চা বিরতির আগমুহূর্তে মাসাকাদজার বলে অপ্রয়োজনীয় স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুমিনুল। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩৩ রান। পরের ওভারের প্রথম বলেই রায়ান বেনেট এলবিডব্লু করেন সেঞ্চুরিয়ান সাদমানকে (১২০)।

এরপর ৬৫ রানের জুটি গড়েন শান্ত-মুশফিক। দলীয় ২৫৯ রানে শান্ত’র (২৩) বিদায়ে সেই জুটি ভাঙে। তখনই শুরু হয় স্বাগতিকদের ব্যাটিং ধস। ২৫৯/৩ থেকে অল্প সময়ের ব্যবধানেই স্কোরবোর্ড রূপ নেয় ২৭৯/৭ এ। রানখরার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে সমালোচিত মুশফিক ৪০ রানে ফেরেন দুর্ভাগ্যের রানআউটে।

এ ছাড়া জাকের আলি ৫ এবং নাঈম হাসান ৩ রান করে ফিরলে বড় শঙ্কায় পড়ে টাইগাররা। তবে মিরাজ-তাইজুল দিনের বাকি কয়েক ওভার নিশ্চিন্তে পার করেছেন। জিম্বাবুয়ের হয়ে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেন মাসেকেসা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button